মঙ্গলবার, ১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রবি’র চাঁদাবাজিতে দিশেহারা, ১৭ লাখ টাকা প্রতারণার অভিযোগ

শেয়ার করুনঃ

স্টাফ রিপোর্টার: দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে বসে রাজনীতি করেন। আর তাঁর দলের নেতাকর্মীরা দেশের অভ্যান্তরে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী দখলবাজি, খুন, ধর্ষণ, মবসৃষ্টি, মন্দির ভাঙচুরসহ সবই যেন প্রতিদিনের হালুয়া রুটি।

মাঠ পর্যায়ে এক জরিপে উঠে এসেছে, বিএনপি’র নেতাকর্মীদের এমন কর্মকান্ডে সম্প্রতি দলটির জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে শৃন্যের কোঠায় চলে যাচ্ছে।

গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি থানা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি রবিউল আলম রবি’র বিরুদ্ধেও অভিযোগ কম নয়।

শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতা চুত্ত হওয়ার পর থেকে তিনি চাঁদাবাজিসহ দখলবাজিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, বিগত ১০ মাস যাবৎ চাঁদাবাজি, জমিদখল, কারখানা দখল, ভাঙচুর, বিচার বসিয়ে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রবি’র এমন কর্মকান্ডে আমবাগ এলাকাবাসী অতিষ্ঠিত হয়ে পড়েছে। তাঁর অত্যাচারে নিরীহ মানুষগুলো প্রতিবাদ করতে না পেরে সৃষ্টিকর্তার ওপর বিচার দিয়ে নিরবে সহ্য করে যাচ্ছেন।

তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অর্থের বিনীময়ে চুক্তিতে মানুষের জমিদখল করে দেন। আমবাগ (বোর্ডঘর) মমিন মার্কেটের দক্ষিণ পাশে আব্দুস সামাদ (সেক্রেটারী) নামে এক ব্যক্তির জমি দখল করে নিয়েছেন রবি। তবে এ জমি চুক্তিতে দখল করে দিয়েছেন দুলাল কাউন্সিলর গংদের। যদিও এ জমি সংক্রান্ত বিষয়ে কোর্টে মামলা চলমান রয়েছে। পরে দখলকৃত এই সম্পত্তিতে তাঁরা মার্কেট নির্মাণ করেছেন তাঁরা।

আমবাগ সমাজ কল্যাণ জামে মসজিদের সাবেক খতিব মরহুম কাশেমী ইমামের সঙ্গেও প্রতারণা করেছে বিএনপি’র এই নেতা।আমবাগ ঢালাই কারখানা এলাকায় কাশেম ইমামকে জমি দেয়ার কথা বলে রবি তাঁর কাছ থেকে ১৭ লাখ টাকা নিয়েছে। আজ পর্যন্ত জমি অথবা টাকা কোনোটাই আর ফেরৎ দেয়নি।

ঢালাই কারখানার মৌড়ে বাচ্চু মিয়ার বোনের ১০ শতাংশ জমি দখল করার অভিযোগ উঠেছে রবি’র বিরুদ্ধে।

আমবাগ প্রাইমারী স্কুলের উত্তর পাশে সিরাজ বাগদাদীর স্ত্রীর কোটি কোটি টাকার জমি দখলের পায়তারা চলছে। আমবাগ পশ্চিমপাড়া আমির এর বাড়ি বিক্রি নিয়েও তিনি প্রতারণার জ্বাল ফেলেছেন। এছাড়াও মিতালি ক্লাব এলাকায় ফরিদ পুরের জামাল মিয়ার ক্রয়কৃত জমি অবৈধভাবে দখল করার চেষ্টা করছেন তিনি।

আমবাগ পশ্চিমপাড়া এলাকার সুদের ব্যবসায়ী (সুদখোর নামে পরিচিত) মকবুল হোসেন অপুকে জমি দখল করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন সাবেক বিএনপি’র এই থানার সভাপতি।

আমবাগ পশ্চিমপাড়ায় এক ব্যক্তিকে অন্যের চলাচলের রাস্তা দেখিয়ে জমি কিনে দেন রবি। জমি কেনার পরে দেখা যায়, ওই ব্যক্তির চলাচলের রাস্ত নেই।

রবি এখানেও প্রতারণা করেছেন। বর্তমানে ওই ভুক্তভোগী চলাচলের রাস্তা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ক্রয়কৃত জমিতে যেতে পারছেন না।

কিছুদিন পূর্বে কোনাবাড়ি নতুন বাজার এলাকায় একটা গুদামে গিয়ে রবি তাঁর দলবল নিয়ে বিচার বসান। প্রহসনের বিচারের নামে ওই গুদাম থেকে রবি ২৭ লক্ষ্য টাকা মেরে দেয় এবং ভুক্তভোগীকে হুমকী দিয়ে আসে।

বিএনপিতে রবি’র তেমন পদ-পদবী না থাকলেও অল্প দিনেই তিনি বনে গেছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। কালিয়াকৈর উপজেলায় সম্প্রতি বিশাল এক বাগান বাড়ি নির্মাণ করছে বলে জানা গেছে।

এক সময় নানা নোংরা কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে একাধিক সূত্রে জানায়।  তাঁরমধ্যে ব্রিটিশ আমলে সীমানায় রাখা পিলাগুলো বিশেষ করে চারদলীয় জামাত-বিএনপি’র জোট সরকারের আমলে চুরি হয়। ওই পিলার চোর চক্রের সঙ্গে তাঁর ছিল সখ্যতা।তিনি নিজেও এই পিলার চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল বলে জানা গেছে। সারা দেশে তাঁর রয়েছে একটি নেটওয়ার্ক।

ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে আন্ত ডাকাত দলের আশ্রয় দাতা হিসেবেও তিনি বেশ পরিচিতি। বিভিন্ন ক্যামিকেল ভর্তি পিকআপ ও ট্রাক ডাকাতি হতো। এ সমস্থ ডাকাতির সঙ্গেও রবি জড়িত ছিল।
তবে কৌশলে এসব ডাকাতি মামলা থেকে রেহাই পেলেও তাঁর বন্ধ আমবাগের সাবেক মেম্বাব ও কাউন্সিলর মো. দেলোয়ার হোসেন দুলাল সেই ডাকাতি মামলায় জেল খেটেছেন।

আমবাগ এলাকার সকল ঝুট-কারখানা ক্ষমতার দাপটে দখলে নিয়েছেন। এসব ঝুট থেকে বিগত ১০ মাসেই রাতারাতি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন।

কিনেছেন নতুন প্রাইভেটকার (টয়োটা করলা ক্রস)। যার মূল্য ৫৫ লাখ টাকারও বেশি। এ যেন আলাদ্দিনের চেরাগ।
দীর্ঘদিন যাবৎ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১০নং ওয়ার্ডের বর্জ্য-আবর্জনা অপসারণ করে আসছে নেত্রকোনার জামাল মিয়া নামে এক অসহায় ব্যক্তি।

হঠাৎ নেতার আবির্ভাব নজর পড়ে জামাল মিয়ার বর্জ্য-আবর্জনার দিকে। টার্গেট একটাই বর্জ্য থেকে চাঁদা আদায়। তবে যে কথা সেই কাজ। পরবর্তীতে ঠিকই জামালের কাছ থেকে প্রতি মাসে প্রায় তিন লাখ টাকা করে রবি চাঁদা নিয়ে থাকে। যদিও জামাল মিয়া ভয়ে মুখ খুলেনি।

সেই চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে তাঁর আমবাগ অফিসে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মারামারি হয়। এতে ৩জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। স্থানীয়রা রবিকে ইঙ্গিত করে বলেন, বর্জ্য অপসারণকারী জামাল একজন অসহায় মানুষ সেও রবি’র কাছে জিম্মি।
সুঠম দেহের অধিকারী সুদর্শন, ওপরের চেহারা দেখতে সুন্দর হলেও তিনি একজন ছ্যাচড়া, প্রতারক ও নোংরা মনের মানুষ হিসেবে আমবাগে পরিচিত।

বাড়ির কেয়ারটেকারের মাধ্যমে এক মহিলার কাছ থেকে টাকা ধার নেন এই ছ্যেচড়া নেতা। দীর্ঘদিন পার হলেও ধারকৃত টাকা ফেরত না দেয়ার অভিযোগ উঠে রবি’র বিরুদ্ধে। এমন প্রতারণা সে অনেকের সঙ্গেই করেছে। টাকা ধার নিয়ে আর দেয়নি। চাইতে গেলে মামলা-হামলা ও পুলিশের ভয় দেখান।
গাজীপুরের সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমের আত্মীয় পরিচয়ে গেল ১৬ বছর তাঁর বাড়ির আশে-পাশে প্রায় অর্ধশত বাসা-বাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ।

বাসা-বাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে রবি হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। তাঁর বাড়ির উত্তর পাশে সরদার ডাইং কারখানা রোড পশু চিকিৎসক পলাশের বাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। এ বাড়ি থেকেও এই ছ্যাচড়া রবি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে একটি সূত্রে জানায়।
তিনি কথায় কথায় আমবাগে বসবাসরত বহিরাগত লোকদেরকে হুমকী দিয়ে এলাকা ছাড়া করে দেন। রবি’র কথামত কেউ না চললে বা টাকা পয়সা ধার না দিলে তাকে আর আমবাগে বসবাস করতে দেন এই সেতা। আর যদি আওয়ামী লীগ সমর্থন হয় তাহলে তো কথাই নেই।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতা চুত্ত হলে ৫ আগস্টের পর কোনাবাড়ি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. খলিলুর রহমান এম.এ এর বাড়িতে হামলা করান। খলিলের পিতার নামে বানেজ আলী মার্কেটে ভাঙচুর এবং লুটপাট করা হয়।
জানা গেছে, গেল ৭ আগস্ট রাত ৩টার সময় রবি’র নেতৃত্বে ওসমান আলীর ছেলে নুর ইসলামসহ ৩০-৩৫ জনের একটি সন্ত্রাসী দল। সবার হাতে দেশী অস্ত্র লাঠি সোটা, শাবল, হামার নিয়ে খলিলের বাড়িতে দোকান পাট ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।

একই দিনে ১০নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. তোফাজ্জল হোসেনের অফিস ভাঙচুর করা হয় রবি’র নেতৃত্বে।
রবি’র রয়েছে একটি বাটপার বাহিনী। এসব বাটপারদের কাছেও আমবাগ বাসী চরমভাবে জিম্মি হয়ে আছেন। আমবাগ তেঁতুলতলার মৌড়ের দোকানদার ময়মনসিংহ থেকে আগত ঘর-জামাই আব্দুল হাই, আয়নাল কন্ট্রাকটার, আকাইলা মেম্বারের ছেলে সুলতান ও কামাল, মিতালী ক্লাব এলাকার ভূমি দস্যু আশরাফুলসহ আরো অনেকেই।

এক সময় কক্সবাজার, ঢাকাসহ গাজীপুরের বিভিন্ন রিসোর্টে সে দেহ-ব্যবসায়ীসহ মাদক দ্রব্য সাপ্লাই দিতেন। সম্প্রতি আমবাগ তেতুঁলতলার মৌড়সহ পুরো এলাকায় তাঁর নেতৃত্বে চলছে ভয়ঙ্কর মাদক কারবার। এ মাদক কারবারের সঙ্গে দুলাল কাউন্সিলরের দুই ছেলে পায়েল ও পলাশ জড়িত বলে গোপন একটি সূত্রে জানায়। আমবাগ তেতুঁল তলার মৌড় ভাতের হোটেলের দোকানদার হেমায়েতের ছোট ছেলেকে দিয়ে এসব মাদক কারবারি করে আসছে।

এ ব্যাপারে কোনাবাড়ি থানা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি মো. রবিউল আলম রবি’র সঙ্গে তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

 

 

সর্বশেষ

ফেসবুক পেজ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০৩১