বিশেষ সংবাদদাতা:
হামলা, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, লুটপাট, হুমকী, মবসহ সবই করে বেড়াচ্ছে পিতা-পুত্রে মিলে। এ যেন মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামল।
অথচ এসবের প্রতিবাদ করার কেউ নেই। অপরাধের যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও থানা পুলিশ মামলা আমলে নিচ্ছে না।
বলছিলাম, কোনাবাড়ি থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন ও তাঁর পুত্র নব্ব সন্ত্রাসী, কিশোর গ্যাংয়ের লিডার ওয়াসিফ সালিম (২৬) এর কথা।
তাঁরা পিতা-পুত্র মিলে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি থানার ছয়টি ওয়ার্ডে বিগত ১০ মাস যাবৎ লাখ লাখ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে।
তাঁর ছেলের কিশোর গ্যাং সদস্যদের চরম অত্যাচারে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
আওয়ামী লীগ করে এমন পরিবার চিহ্নিত করে চাঁদাবাজি,মারপিট, লুটপাটসহ মবের মত ঘটনা ঘটিয়ে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বাংলায় একটি প্রভাত বাক্য আছে, যে বনে বাঘ নেই সেই বনের বিড়ালই হয় বাঘ। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের লোকজন নেই, প্রতিবাদ করার মত কেউ নেই ফাঁকা মাঠ পেয়ে বাবুল ও তাঁর পুত্র যখন-তখন যা-ইচ্ছে তাই করে বেড়াচ্ছে।
বিগত ১০ মাসে এদের হিংস্র রাজনীতির থাবায় সাধারণ ব্যবসায়ী ও নিরীহ মানুষেরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসীন্দা সূত্রে জানায়, বিগত ১০ মাসে এদের হিংস্র রাজনীতির শিকার হয়ে সাধারণ ব্যবসায়ী ও নিরীহ মানুষেরা নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।
সচেতন মহলের মতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোনাবাড়িতে এমন অত্যাচার ছিল না। অথচ বিএনপি ক্ষমতায় না আসতেই কোনাবাড়ির জাহের আলীর ছেলে বাবুল হোসেন ও তাঁর পুত্র ওয়াসিফ সালিমের বর্বরতার শিকার হচ্ছে অনেকেই।
সচেতন মহল আরো বলেছেন, এই বাবুল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুই-একটি রাজনৈতিক মামলায় পড়া ছাড়া মায়ের গর্ভেই ছিল। তিনি বিগত দিনে নিরাপদেই বিসিকের অনেক কারখানার ঝুট ব্যবসা পরিচালনা করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে।
স্থানীয় কাউন্সিলর শফিকুল আমিন তপনসহ একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা বিএনপি’র এই নেতাকে সেল্টার দিতেন। বিএনপি’র একজন প্রবীণ নেতা বলেন, সবই দেখছি, কিন্তু বলার মত শক্তি আমার আর নেই, আগের দিনও নেই।
তিনি বলেন, আমরা এক সময় আওয়ামী লীগ-বিএনপি এক সাথে বসে চা খেয়েছি। হানাহানি ছিল না। কিন্তু বর্তমানে যা দেখছি বলার মত ভাষা নেই। সবই উল্টা-পাল্টা। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, লুটপাট, হুমকী, মারপিটসহ মবের মত ঘটনা চারদিকে ঘটছে। সেদিক থেকে কোনাবাড়িও পিছিয়ে নেই।
প্রবীণ এই নেতা বাবুলকে ইঙ্গিত করে বলেন, কোনাবাড়িতে বিএনপি’র একটি পরিবার লাখ লাখ নিরীহ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে আমরা দেখছি। এটাকে রাজনীতি বলে না। বিগত ১০ মাস ধরে কোনাবাড়িতে অনেক অন্যায়-অবিচার হচ্ছে। সাধারণ মানুষ এদের প্রতি ক্ষুব্ধ। সামনে যেকোনো নির্বাচন হলে বিএনপিকে কেউ ভোট দেবে না।
একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চরম ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যায়, গেল ২৭ মে রাত ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে বেশ কিছু যুবকের একটি দল। তাঁরা সবাই কিশোর গ্যাং। এর মধ্যে বিপ্লব খান নামে এক বয়স্ক ব্যক্তিও রয়েছে।
তাঁদের প্রত্যেকের হাতে ধারালো চাপাতি দেশীয় অস্ত্র। তাঁরা কোনাবাড়ির জরুন এলাকার বৃদ্ধ নাসির উদ্দিন পালোয়ানের বাড়িতে প্রবেশ করে। এরপর আওয়ামী লীগ করার অপবাদ দিয়ে ছয়জনের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
হামলার শিকার হন দুই নারীও। তাঁরা চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে নাসির উদ্দিন পালোয়ান (৯০) নামে এক বৃদ্ধকে কোপায়। দেশীয় অস্ত্রের কোপে বৃদ্ধার মাথার খুলি উল্টে মগজ বের হয়। পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে ওই বৃদ্ধ নাসির মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
ওইদিন হামলার শিকার হন নাসির উদ্দিন পালোয়ানের ছেলে আক্তার পালোয়ানসহ পরিবারের ছয়জন।
রাজনৈতিকভাবে নাসির উদ্দিন পালোয়ানের পরিবার আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেন। মূলত এর জেরেই এমন বর্বরতা হামলা চালানো হয়। হামলা শেষে পুরো পরিবারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাড়ির ভেতরে থাকা নগদ অর্থসহ জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায় ওয়াসিফ সালিম ও সালাউদ্দিন মিয়া গংরা।
কোনাবাড়ির সমস্থ এলাকাজুড়ে চলছে নিত্য নতুন কায়দায় ওয়াসিফ সালিমের অপরাধ জগৎ। বাবা থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় এদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করতে গেলে থানা তা আমলে নেয় না।
মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সন্ত্রাসী, মারপিট থেকে শুরু করে মবের মতো বড় ধরণের অপরাধমূলক ঘটনা সবই ওই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য দ্বারা হয়।
এ ব্যাপারে হামলার শিকার নাসির উদ্দিন পালোয়ানের নাতি ও আক্তার পালোয়ানের ছেলে নাজমুল পালোয়ান তাঁর নামে ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করে লিখেছেন তা তুলে ধরা হলো,
১ম পোস্ট: কোনাবাড়ী থানা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন তার ছেলে শীর্ষ সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ ও কিশোর গ্যাং এর মূল পৃষ্ঠপোষক ওয়াসিফ সালিম, জরুন ৭নং ওয়ার্ডের সালাউদ্দিন মিয়া গং নেতৃত্বে আমার দাদা নাসির উদ্দিন পালোয়ান, আমার বাবা, আমার ভাগিনা, আমার বোন, আমার মা ও আমি নিজ সহ আমাদের বাড়ীতে এসে ডাকাতি ও লুটপাট করে নেয় ঐ সময়ের ধারনকৃত বিশেষ এক ভিডিও ফুটেজ এবং কি একে একে আমার পরিবারে সবাই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সহ বিশ্ববাসীর কাছে এর সুনির্দিষ্ট তদন্ত করে এইসব ঘৃণিত বিএনপির সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে ফাঁসির জোরালো দাবি করছি এবং কি জাতিসংঘ সহ বিশ্বের সকল নেতাদের কাছে জোরালো দাবি।
২য় পোস্ট: আজ বিশ্ব বাবা দিবস। বাবা দিবসে পৃথিবীর সকল বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা। বাবা মানে মাথার উপরে বটবৃক্ষের ছায়া। বাবা আজকের এইদিনে তোমাকে আমাদের কাছ থেকে অনেক দূরে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল এই দেশের মানুষ রূপি হায়নারা। জরুন ৭নং ওয়ার্ড ও কোনাবাড়ী থানা বিএনপি বাবুল হোসেন তার ছেলে সালিম, সালাউদ্দিন মিয়া গং নেতৃত্বে আমার দাদা নাসির উদ্দিন পালোয়ান আমার বাবা আমার ভাগিনা আমার বোন আমার মা ও আমি নিজ সহ আমাদের বাড়িতে এসে ডাকাতি ও লুটপাট করে নেয় এবং কি একে একে আমার পরিবারে সবাই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে, গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন হাসপাতালের বেডে সবাই ভর্তি আছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সহ বিশ্ববাসীর কাছে এর সুনির্দিষ্ট তদন্ত করে এইসব ঘৃণিত বিএনপি সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে ফাঁসির জোরালো দাবি করছি জাতিসংঘ সহ বিশ্বের সকল নেতাদের কাছে জোরালো দাবি।
নাজমুল বলেন, ঘটনার দিন কোনাবাড়ি পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে ফোন করে বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়। যাতে কোনো প্রমাণ না থাকে। নাজমুল বলেন, এতো বড় একটি ঘটনার বিষয়ে থানায় মামলা দিতে গিয়েছিলাম। দুঃখের বিষয় থানা মামলা আমলে না নিয়ে সালিমের নাম বাদ দিতে বলে।
এই পোস্টে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। এরমধ্যে মমিন মোল্লা নামে এক ব্যক্তি তাঁর ফেসবুক আইডি থেকে মন্তব্য করেছেন, নাসির পালোয়ানের মতো একজন মানুষের গায়ে হাত উঠানোর মতো নিকৃষ্ট কাজ যারা করেছে তাদের বিচার অতি দ্রুত আশা করছি। কিছু হাইব্রিড বিএনপিদের কারণে আজ সুশীল জরুনে সন্ত্রাসীতে ভরপুর। এসব সন্ত্রাসীদের বিচার চাই।
অপর দিকে বাইমাইল এলাকার বাদশা নামের আরো এক যুবককে ঈদের আগের দিন রাতে ধরে নিয়ে যায় বিএনপি নেতা বাবুলের ছেলে ওয়াসিফ সালিম। বাদশার অপরাধ সে আওয়ামী লীগ সমর্থন করেন।
সূত্রে জানায়, আওয়ামী লীগ করার অপবাদ দিয়ে বাদশার বাড়ি থেকে রাতের অন্ধ্যকারে বাবুলের ছেলে ওয়াসিফ সালিম ও তাঁর লোকজন তুলে নিয়ে যায়। এরপর বাবুলের বাড়ির সামনের অফিসে নিয়ে রাতভর আটক রাখে বাদশাকে। সারারাত অনেক মারপিট আর নির্যাতন করার পর ভোরবেলা পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।
পুলিশ বাদশাকে মামলা দিয়ে কোর্টে চালান করে। বাদশার নামে ইতোপূর্বে কোনো মামলা মোকদ্দমা ছিলো না। বাদশা রাজধানী ঢাকাতে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে কোনো মতে তাঁর সংসার চলতো। বাদশা’র একজন ফুটফুটে অবুঝ সন্তান রয়েছে। ঈদের আগের রাতে তিনি ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেছিল ঈদ করার জন্য।
বিএনপি’র একাধিক নেতৃবৃন্দের মন্তব্য: নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোনাবাড়ি থানা বিএনপি’র একাধিক নেতৃবৃন্দরা বলেন, বাবুল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও কোনাবাড়ি বিসিক শিল্পনগরীর বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানার সাথে কোটি কোটি টাকার ঝুট-ব্যবসা বাণিজ্য করেছে।
বর্তমানে তাঁর ছেলের একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ড “লক্ষণীয়’’। এদের হিংস্র আচারণের ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হোক বা মেয়রের নির্বাচন হোক। এদের কর্মকান্ডের ফলে ভোটের মাঠে প্রভাব পড়বে। বিগত ১০ মাসে বাবুল নিজেও অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ীকে হুমকী দিয়ে এলাকা ছাড়া করিয়েছে এ খবরও নেতাদের নলেজে আছে বলে জানান।
সূত্রে জানায়, কাশিমপুরের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা শওকত হোসেনের আস্কারায় বাবুল ও তাঁর ছেলে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
মাঠ পর্যায়ে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সঙ্গেও বাবুলের তেমন সম্পর্ক ভালো নেই। তবে নিজের ব্যক্তিগত দল ভারী করার জন্য সন্ত্রাসী ও টোকাইদের লালন-পালন করে আসছে। এসব টোকাই ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে অন্যতম রংপুইরা শান্ত মির্জা ও সন্ত্রাসী মালেকসহ আরো অনেকের তালিকাই রয়েছে।
এদেরকেই ব্যবহার করে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সন্ত্রাসী, মারপিট, লুটপাটসহ মবের মত ঘটনা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
এমন উগ্র আচারণের দায়ে দলটির ভাবমূর্তি চরম ভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে বিএনপি’র ওই নেতারা জানান।
কয়েক মাসে পূর্বে কোনাবাড়ির হাউজিংয়ে সালাউদ্দিন সিদ্দিকীর ছেলের মিলাদ-মাহফিলকে কেন্দ্র করে বাবুল ও তাঁর ছেলে ওয়াসিফ সালিম কোনাবাড়ি থানা বিএনপি’র সহসভাপতি ও শ্রমিক নেতা আব্দুল বারেক সরকারের বাড়ি-ঘরসহ একাধিক দোকানপাটে হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে।
এ ব্যবাপারে কোনাবাড়ি থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে সংযোগ পাওয়া যায়নি।