শনিবার, ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মৌচাক পুলিশ ফাঁড়িতে ২দিন আটকে রেখে ৫৫ হাজার টাকা ঘুষ নেয়া হয়

শেয়ার করুনঃ

স্টাফ রিপোর্টার:
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ফাঁড়িতে এক কাভার্ড ভ্যান চালককে ডেকে এনে
তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর সঙে মিমাংসার কথা বলে দুই লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে মৌচাক ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ মহিদুল ইসলামসহ আরো দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে।

তাঁদের দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় দুই দিন এক রাত ভুক্তভোগী সবুজ সরকার ও তার স্ত্রী সেলিনা
বেগমকে ফাঁড়িতে আটকে রাখা হয়। অমানবিক নির্যাতন শেষে ৫৫ হাজার টাকা এনে দেয়া হয়।

এ নিয়ে ভুক্তভোগী সবুজ সরকারের স্ত্রী সেলিনা বেগম বাদী হয়ে ওই তিন পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে গেল ২২ জানুয়ারি গাজীপুর পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযুক্ত অপর দুই পুলিশ সদস্য হলেন, মৌচাক
পুলিশ ফাঁড়ির উপ- পরিদর্শক (এস আই) মতিন এবং উপ-সহকারী পরিদর্শক (এ এস আই) হাবিবুর রহমান।

ভুক্তভোগী সবুজ সরকার টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ি থানার চাটাভাঙ্গা থানার নুরুদ্দিন সরকারের ছেলে।

তিনি কালিয়াকৈর উপজেলার
সফিপুর দক্ষিণ পাড়া এলাকায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে এবং স্থানীয় একটি কারখানার কাভার্ড ভ্যান চালাতেন। স্ত্রী নিজেও পোশাক কারখানায় কাজ করেন।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানায়, গেল ১০ ডিসেম্বর মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মহিদুল ইসলামের নির্দেশে এ এস আই হাবিবুর রহমান কাভার্ড ভ্যান চালক সবুজ সরকারকে ফাঁড়িতে ডেকে আনেন।

সবুজ সরকার সরল বিশ্বাসে মৌচাক ফাঁড়িতে আসলে তখন তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

ভুক্তভোগী গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে মৌচাক ফাঁড়ির ইনচার্জ মহিদুল ইসলাম জানান, তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ইতি খানম তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে।

এ সময় অভিযোগ নিষ্পত্তি করার জন্য দুই লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করেন ফাঁড়ি ইনচার্জ মহিদুল ইসলাম।

ভুক্তভোগীর স্ত্রী সেলিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী আমাকে ফোন করে বলে মৌচাক ফাঁড়িতে আটকে রেখেছে ইনচার্জ মহিদুল ইসলাম ২ লক্ষ টাকা চেয়েছে তুমি যা পারো নিয়ে আসো। তখন আমি ধার দেনা করে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে আসলে তাঁরা আমাকে ফাঁড়ির মেইন গেইট হইতে বাহিরে গেইটের পূর্বপাশে নিয়ে যায়।

তখন ইনচার্জ মহিদুল ইসলামের উপস্থিতিতে এ এস আই হাবিবুর রহমানকে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়।

টাকা কম দেওয়াতে এ এস আই হাবিবুর রহমান ও দুই পুলিশ ফাঁড়িতে আসিয়া আমার স্বামীকে আমার সামনেই বেধড়ক মারধর শুরু করে।

আমি ইনচার্জ মহিদুলের হাত পা ধরে কান্না কাটি করি এবং বলি যে আমার স্বামীকে মারছেন কেন? তখন ইনচার্জ মহিদুল বলে আরো দশ হাজার টাকা আনো, আমি এ এস আই হাবিবকে মারধর করতে নিষেধ করে দেবো।

আমি আবার বাড়িতে গিয়ে আরো ৫ হাজার টাকা নিয়ে মহিদুল স্যারকে দেই।

সেলিনা আরও বলেন, মোট ৫৫ হাজার টাকা দেওয়ার পরও আমার স্বামী ও আমাকে
অন্যায় ভাবে দুই দিন এক রাত ফাঁড়িতে আটকে
রাখা হয়। তখন এস আই মতিন
আমাকে বলেন আরো ৪০ হাজার টাকা নিয়ে আসো। আমি আইসিকে বলে তোমার স্বামীকে
ছেড়ে দেই। আমি অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি আমাকে কুপ্রস্তাব দেন।

ইনচার্জ মহিদুল ইসলাম ও এ এস আই হাবিবুর রহমান আমার স্বামীকে অবৈধভাবে দুই দিন ধরে ফাঁড়ির হাজতে আটকে রাখেন এবং আমাকেও ফাঁড়িতে আটকে রাখেন।

মিথ্যা নাটক সাজিয়ে ইনচার্জ মহিদুল ইসলাম নিজে বানোয়াট এজাহার লিখে তালাক প্রাপ্ত দ্বিতীয় স্ত্রী ইতি বেগমকে দিয়ে জোরপূর্বক এজাহারে স্বাক্ষর নিয়ে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করান।

আমার স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী মামলা করতে রাজি ছিলেন না। মিথ্যা মামলা রুজুর পর আমার স্বামীকে ১২ ডিসেম্বর বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন।

ভুক্তভোগী সবুজ সরকার জামিনে বের হয়ে এসে
বলেন, গেল নভেম্বর মাসের ৬ তারিখ আমার দ্বিতীয় স্ত্রী ইতি খানম নিজে আমাকে তালাক দেয়। পরবর্তীতে আমার বড় স্ত্রী
সেলিনা বেগম এর কাছ থেকে দেনমোহর বাবদ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। নিজে তালাক দিয়ে
দেনমোহর এর টাকা নেওয়ার পরও থানায় মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন অভিযোগ দায়ের করে। সেই
অভিযোগে এ এস আই হাবিবুর রহমান আমাকে
ফাঁড়িতে ডেকে দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে। পরে ধারদেনা করে ৫৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু
তাদের চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারায় তালাক
প্রাপ্ত দ্বিতীয় স্ত্রীর বড় বোন হাফিজা বেগমকে দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে ধর্ষণ মামলা করানো হয়।
তিনি বলেন,জেল থেকে জামিনে বের হয়ে এসে দেখি আমার চাকুরী নাই।

আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি শারীরিক মানসিক ভাবে নির্যাতন মিমাংসার কথা বলে ৫৫ হাজার টাকা নেওয়ার
জন্য ওই তিন পুলিশ সদস্যের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। তাদের শাস্তি দেখে যেন আর কেউ এমন অপরাধ করতে না পারে।

অভিযুক্ত এ এস আই মতিনের মোবাইল ফোনে কল দিলে রিসিভ না করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

এ বিষয়ে জানতে মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত চলমান আছে। তদন্ত চলমান বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবেনা। বিষয়টি সিনিয়র
স্যাররা আছেন তাঁরা বলতে পারবেন।

এব্যাপারে গাজীপুর পুলিশ সুপার (এসপি) ড. চৌধুরী মোঃ যাবের সাদেক জানান, ওই নারীর অভিযোগটি পেয়েছি। এ বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ

ফেসবুক পেজ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭