এম রানা:
দুর্নীতি, অনিয়ম ও ফাইল আটক করে উৎকোচ গ্রহণ করাসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল ৭ এর কর নির্ধারণ কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে।
তিনি যে অফিসে কাজ করেন সেই অফিসকেই একটি দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে এমন অপরাধ করার পরেও চাকুরি বহাল থাকে কিভাবে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক যাচ্ছে সিটি’র অঞ্চল সাত জুড়ে।
একটি সূত্রে জানায়, হারুন এর আগেও সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাৎ করে ধরা পড়েন। এঘটনায় তাকে ওএসডি করা হয়েছিল। এরপরেও ওই ঘুষখোর কর্মকর্তা বহাল তবিয়তে।
সাধারণ জনতা বলছেন, ঘুষ ছাড়া তিনি কিছুই বুঝেন না। টেক্সের একটি কাজের জন্য ঘুষ নিয়েও তিনি বিপাকেও পড়েন। এ নিয়ে একটি ভিডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়।
ওই ভিডিওতে নগরীর ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সেলিম রহমানের ব্যক্তিগত লোক মো. নাজমুল হাসান ঘুষ নেওয়ার দায়ে হারুনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে দেখা যায়।
নাজমুল সেলিম কাউন্সিলরের লোক তা পরিচয় গোপন রেখে একটি টেক্সের কাজের অঞ্চল সাতে আসেন। এরপর হারুনকে ৯ হাজার টাকা ঘুষ দিলে তা গ্রহণ করেন। হারুন যেকোনো লোকের কাছ ঘুষ নিতে দ্বিধা করেন না।
নাজমুল ঘুষের ৯ হাজার টাকা দিয়ে নিয়মনুযায়ী টেক্স পরিশোধ করে কাজ সম্পূর্ণ করেন। এরপর তিনি ঘুষের দেয়া ৯ হাজার টাকা যেভাবে ফেরৎ চান। তা ভিডিও থেকে আঞ্চলিক ভাষায় হুকহু তুলে ধরা হলো এবং ভিডিওটি প্রতিবেদনে যুক্ত করা হলো।
নাজমুল: টেকা বাইর কর, টেকা বাইর কর বেটা, তর মত ঘুষখোর এই দেশে চিবি দিয়ে মাইরা ফালামু। টেকা বাইর কর বুঝুস নাই এহনো, একবার চামড়া তুইল্যা ফালামু টেকা বাইর কর। এর মাঝে নাজমুলকে বসতে বলেন হারুন। টেকা বাইর কর ফের বললে হারুন বলেন, আমার কাছে তো অনেক টাকাই আছে। টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করলে নামজুল বলে, তর টেকার নোটের নাম্বার আমার কাছে আইলো কেমনে “ক’’। তুই টেকা বাইর কর, তুই কি টেক্স আদায়কারী না, টেক্স আদায়কারী হইলো বকতিয়ার আর হইলো হাসান। এ ঘটনায় নাজমুল হারুন অর রশিদকে চরমভাবে অপমানিত করে।
এ ছাড়াও কর নির্ধারণ কর্মকর্তার হারুনের নামে অভিযোগের শেষ নেই। তিনি ঘুষের দায়ে ওএসডিও হয়েছিলেন।
জানা যায়, ২০২১ সালে রিভিউ বোর্ড চলাকালে জনতার হাতে ঘুষের নগদ মোটা অঙ্কের অর্থসহ হাতেনাতে ধরা পড়েন হারুন অর রশিদ।
পরবর্তীতে তৎকালীন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম তাঁকে ওএসডি করে নগর ভবন প্রশাসন শাখায় সংযুক্ত করেন। এরপর ২০২৩ সালের শেষের দিকে পূবাইলে বদলি করা হয় তাঁকে। সেখানে গিয়েও একই কায়দায় ঘুষ বাণিজ্য শুরু করেন হারুন। তাঁর নামে পূবাইলেও অভিযোগের শেষ নেই।
সূত্র জানায়, টাকা ছাড়া কোন নথিতে স্বাক্ষর করেন না হারুন। সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা তিনি কখনোই করেননি।
গেল ২৩ সেপ্টেম্বর পুনরায় অঞ্চল-৭ এ বদলি হয়ে এসেই তিনি অঞ্চল সাতকে ফের ঘুষের স্বর্গরাজ্যে রূপান্তিত করেন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল ৭ এর চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের প্রতিদিন অর্থ প্রদানের জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে হারুন।
চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীরা জানান, প্রতিদিন হাজার খানেক করে টাকা দিতে হবে তাকে, নইলে বদলি করে দিবেন অথবা চাকুরি চুত্ত করবেন বলে হুমকী দেয় হারুন।
এ বিষয়ে চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীরা সংশ্লিষ্ট অঞ্চল ৭ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (অনিক)কে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়। বিষয়টি দেখারও আশ্বাস দেন আনিক।
চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীরা বলেন, হারুন অর রশিদ আমাদের কাছে ঘুষ দাবি করেছেন। আমরা ঘুষের টাকা দিতে অস্বীকার করলে হারুন বদলির ব্যবস্থা করেছে বলে হুমকী দেয়।
গেল ১৭ নভেম্বর সকালে একটি মাস্টাররোল বদলির কাগজ নিয়ে অফিসে আসে হারুন। এরপর তিনি বলেন, তোমাদের বদলী করে দিয়েছি। তোমরা আর এ অফিসে আসবে না। তোমরা এখনি অফিস থেকে বের হও। একথা বলাতে মাস্টাররোলের কর্মচারীরা ক্ষিপ্ত হলে হারুন ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি অফিসে আসেনি।
মাস্টাররোলের কর্মচারীরা আরো বলেন, আমরা তখনও নগর ভবন থেকে কোন চাকুরি চুত্তের আদেশ পাইনি, আমরা অফিসের আদেশের কথা জানতে চাইলে তিনি নিজেই অফিসে আদেশ করেছেন বলে উল্লেখ করেন। অফিসের আদেশের কথা বলাতে তিনি ভয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান।
অঞ্চল ৭ এর স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, হারুন একজন বেপরোয়া ঘুষখোর কর্মকর্তা। তিনি এমন কোনো লোক নেই যে, তাঁর কাছে থেকে ঘুষ নেননি। অনেক লোকজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েও কাজ করেনি। তিনি সিটি কর্পোরেশনের স্বার্থ না দেখে নিজের ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষা করাই তাঁর আসল চরিত্র বলে জানা যায়।
তিনি তাঁর পথের কাঁটা দূর করতে একের পর এক কর্মচারীদের বদলি করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। যাতে নির্বিগ্নে দুর্নীতি চালিয়ে যেতে পারেন।
এ ব্যাপারে কর নির্ধারিত কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা এড়িয়ে গিয়ে অন্যা প্রসঙ্গে কথা বলেন, তিনি বলেন, আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশানর (অতিরিক্ত সচিব) শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁর পিসএস বলেন, স্যার মিটিংয়ে আছেন।