রানা:
গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সজিব দেবনাথের নামে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, বিএনপি’র এক নেতাকে না পেয়ে তাঁর ছেলেকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। অতপরঃ ছেলেকে শারীরিক নির্যাতন শেষে নাশকতা মামলায় জড়ানোর ভয় দেখানো হলে দুই লাখ টাকায় রফাদফা হয়। এ বিষয়ে একটি ভিডিও রেকর্ড পাওয়া গেছে।
ওই ভিডিও রেকর্ডে ভুক্তভোগী বলেন, গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানা পুলিশের এসআই সজিব দেবনাথ পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। দরকষাকষি শেষে দুই লাখ টাকা সমঝোতায় মামলা হালকা করা হয়।
এ ঘটনা গেল জুলাই মাসের দিকে। ওই সময় ছাত্র জনতার কোটা সংস্কার আন্দোলন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছিল বলে অভিযোগকারী বলেন।
ভুক্তভোগী জানান, এসআই সজিব দেবনাথ গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) গাছা থানায় কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাসন থানায় কর্মরত আছেন।
ভুক্তভোগীর নাম মোহাম্মদ আলী ও ছেলে মো. জিহান আল রাব্বী। মোহাম্মদ আলী গাছা থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ছেলে রাব্বি উত্তরা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।
মোহাম্মদ আলী জানান, গেল-২৮ জুলাই ঢাকায় বিএনপির একটি বড় কর্মসূচি ছিল। এর ৪-৫ দিন পূর্বে তাঁর বাড়িতে তাঁকে খুঁজতে আসেন তৎকালিন গাছা থানার এসআই সজিব দেবনাথ। এ সময় মোহাম্মদ আলীকে খুঁজে না পেয়ে তাঁর ছেলে মো. জিহান আল রাব্বীকে ধরে নিয়ে যান ওই দারোগা বাবু।
ভুক্তভোগী বলেন, “আমি তখন বাড়িতে ছিলাম না। এসআই সজিব আমার বাড়িতে এসে আমাকে না পেয়ে আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় লোকজন বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও পুলিশ তাঁতে কর্ণপাত করেনি।
এরপর থানায় নিয়ে মোহাম্মদ আলীর ছেলেকে ভয়ঙ্কর ভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। লাঠি দিয়ে, লাথি ও কিল-ঘুষি মেরে আঘাত করেন সজিব। কোমরে আঘাত করে অসুস্থ করে ফেলানো হয়।
জানা গেছে, এসআই সজিব দেবনাথ মেরেই ক্ষান্ত হননি, ওই সময় তিনি পাঁচ লাখ টাকাও দাবি করেন। অনেক তদবিরের ফলে শেষে দুই লাখ টাকায় সমঝোতা করা হয়। এরপরেও ছেলে মো. জিহান আল রাব্বীকে হালকা মামলায় অভিযুক্ত করে কোর্টে চালান দেওয়া হয়।
এরপর উকিলের মাধ্যমে তাঁকে জামিনে বের করেন। রাব্বী বলেন, “২৮ জুলাইয়ের কয়েক দিন আগে এসআই সজিব দেবনাথ আমাদের বাড়িতে এসে বাবাকে খুঁজতে থাকেন। বাবা বাড়িতে না থাকায় আমাকে ধরে নিয়ে যান। থানায় নিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। আমার ছাত্র পরিচয় দেওয়ার পরেও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং শারীরিক আঘাত করতে থাকেন।
রাব্বি বলেন, ‘তোর জীবন শেষ করে দেব। বাঁচতে হলে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে, না হলে তোর জীবন এখানেই শেষ।
জানা গেছে, ওই শিক্ষার্থী কোনো প্রকার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয় বলার পরেও তিনি কথা শোনেননি। তাঁকে (ছাত্র) লাঠি দিয়ে পেটানো হয়, লাথি, কিল, ঘুষি মেরে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করা হয়। জিহান বলেন, “আমার নামে ফুটপাতের মারামারির মামলা দেওয়া হয়। অথচ আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই সময়। পরে বাবার পরিচিত লোকের মাধ্যমে দুই লাখ টাকা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসা করি এবং জামিনে নিয়ে আসি।
জিহানের বাবা বলেন, এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তিনি বলেন, “আমার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে এসআই সজিব দেবনাথ আমাকে হয়রানি করেন। ছেলের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আমাকে আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করেন। আমি এই ঘটনার জন্য তাঁর কঠোর শাস্তি দাবি করছি।
একটি সূত্রে জানায়, এসআই দেবনাথ গাছা থানায় কর্মরত অবস্থায় একাধিক বিএনপি নেতা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের হেনস্তা করেছেন। বিএনপি নেতাদের ধরতে না পেরে তাঁদের সন্তানদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন।
গাছা থানাধীন ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. কামরুল ইসলামের ছেলে রফিকুল ইসলাম সাজনকে আটক করেন এসআই দেবনাথ। পরে মিথ্যা মামলার ভয়-ভীতি দেখিয়ে সেখান থেকেও ১ লক্ষ টাকা ঘুষ নেন তিনি। গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানা এলাকায় এমন অহরহ অভিযোগ রয়েছে ওই পুলিশের এসআইয়ের নামে।
তবে এ ঘটনায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অভিযোগের সত্যতা যাচাই ও অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ভুক্তভোগী পরিবার স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের কাছে সুবিচার চেয়েছেন।
এ সংক্রান্ত অভিযোগের ব্যাপারে এসআই সজিব দেবনাথ এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি ভিত্তিহীন এবং অভিযোগ অস্বীকার করেন।